অনিশ্চয়তা কাটছে, কমছে সোনার দাম

অনিশ্চয়তা কাটছে, কমছে সোনার দাম

যেমন হু হু করে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছিল, ঠিক তেমনভাবেই কমছে। গতকাল সোমবার সোনার দাম কমেছে ১ শতাংশ। প্রতি আউন্সের দাম হয়েছে ১ হাজার ৭৭১ দশমিক ২২ ডলার। কেবল এই নভেম্বর মাসেই বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৬ সালের নভেম্বরের পর এই প্রথম এক মাসে এত কমল সোনার দাম। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দাম আরও কমবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

কেবল সোনা নয়, গতকাল বিশ্ববাজারে কমেছে রুপা ও প্লাটিনামের দামও। প্রতি আউন্সে ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে রুপার দাম। প্রতি আউন্সের দাম হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৩ ডলার। প্লাটিনামের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে প্রতি আউন্সের দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২০ দশমিক ৩৬ ডলার।

নভেম্বর মাসজুড়েই বিশ্ববাজারে কমেছে সোনার দাম। অথচ কয়েক মাস আগেই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত এই ধাতুর দাম বলা যায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা ঢেউ ও ডলারের দাম কমে যাওয়ায় মানুষ সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ বলে মনে করা শুরু করে।

অনিশ্চয়তা যত বাড়ছিল, ততই বাড়ছিল সোনার দাম। টিকা আসছে, অনিশ্চয়তাও কাটছে। এতে কমতে শুরু করেছে সোনার দর।

করোনা ছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সোনার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার কারণেও সবাই সোনার মজুত বাড়িয়েছিল। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম, নতুন রেকর্ড হয়। গত ২৭ জুলাই প্রথম ৯ বছরের রেকর্ড ভাঙে দাম। বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (এক আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনার দাম বেড়ে হয় ১ হাজার ৯৪৪ ডলার। এর আগে ২০১১ সালে প্রতি আউন্স সোনার দাম উঠেছিল ১ হাজার ৯২১ ডলারে। অর্থাৎ সে সময়ের চেয়ে ২৪ ডলার বেড়ে দামের নতুন রেকর্ড গড়ে মূল্যবান এই ধাতু। ওই বৃদ্ধি নিয়ে বছরের ৭ মাস পর্যন্ত সোনার দাম বাড়ে ২৭ শতাংশ।

এরপরও বাড়তে থাকে দাম। আগস্টে একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর ৭ আগস্ট থেকে কিছুটা কমতে দেখা যায়। এভাবেই কমা–বাড়া চলতে থাকে। নভেম্বরে এসে বেশ কমতে শুরু করে দাম। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন ৯ মাস ধরে বিশ্বকে আটকে রাখা করোনা নামক ভাইরাসের একটি টিকা আসছে তা নিয়ে আশা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট আসছেন এবং করোনার সংকট কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে চীন।

আসলে যেকোনো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মন্দার সময় মূলত সোনার চাহিদা বেড়ে যায়। নভেম্বরে করোনার টিকা নিয়ে বেশ কয়েকটি সুখবর আসে। প্রথমে মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক জানায়, তাদের টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকর। এরপর সুখবর দেয় আরেক মার্কিন কোম্পানি মডার্না। এরপর ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে তাদের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে। রাশিয়াও টিকার অগ্রগতির কথা জানায়। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটছে, এমন একটি আশা বিরাজ করতে শুরু করে বিনিয়োগকারীদের মনে। তাঁরা আর হুড়মুড় করে সোনা কিনছেন না। ফলে কমছে সোনার দাম।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিএমসি মার্কেটসের প্রধান কৌশলবিদ মাইকেল ম্যাকার্থি বলেন, ভ্যাকসিন আসছে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আশাবাদ সোনার মতো নিরাপদ-আশ্রয়ে বিনিয়োগের আকর্ষণকে কমিয়ে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে এর দাম ১ হাজার ৮০০ ডলারের নিচে নামায় বিক্রি কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নভেম্বরের শুরুতে মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেন জেতার পর ট্রাম্প গদি ছাড়া নিয়ে ঝামেলা করবেন, এমন একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা কেটে যাওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে সোনার বাজারে। এ ছাড়া টানা তিন মাস শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে চীনের, যা বিনিয়োগকারীকে ঝুঁকি আছে, এমন মনোভাব থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দর নিম্নমুখী থাকায় দেশের বাজারেও সোনার দাম কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। গত ২৫ নভেম্বর থেকে দেশের বাজারে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকারের দাম হয় ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি হয় ৭০ হাজার ৬৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার অলংকার প্রতি ভরি হয় ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা।

মুদ্রাবাজারেও ভ্যাকসিনের প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ডলারের দাম কমে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি আশা তৈরি হয়েছে যে করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থা হয়তো আরও শিথিল হবে। গতকাল বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। তবে বেড়েছে ইউরো ও অস্ট্রেলিয়ান ডলারের দাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *