নাটোরের গুরুদাসপুরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইনে (১০৯ নম্বর) ফোন করে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে দেয়। এ ঘটনা চলতি বছরের শুরুর দিকে। মেয়েটি ফোন করার পর হেল্পলাইন থেকে তথ্য পাঠানো হয় গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেনের কাছে। তিনি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে মেয়েটির বাড়িতে পাঠিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন।
শুধু বাল্যবিবাহ নয়, যেকোনো ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে হেল্পলাইনটি চালু করে। তবে চলতি বছর এতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধবিষয়ক কলের বদলে করোনা নিয়ে জানতে বেশি ফোন আসছে।
হেল্পলাইনটি পরিচালিত হয় মন্ত্রণালয়ের নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায়। তাদের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১১ লাখ ১৯ হাজারের মতো কল আসে। এর মধ্যে মাত্র ১ লাখ ১৯ হাজার কল আসে সাধারণ চিকিৎসা, পরামর্শ, পুলিশি সহায়তা, আইনি সহায়তা ও তথ্য চেয়ে। বাকি কলগুলোকে অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত করা হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু বাদ দিয়ে অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত কলগুলো মূলত করোনা নিয়ে। ১০ মাসে সাধারণ চিকিৎসা বিষয়ে জানতে ১ হাজার ৭৩৭, পরামর্শ সেবা পেতে ৫৭৯, পুলিশি সহায়তা পেতে ১১ হাজার ৫৭৯, আইনি সহায়তা পেতে ১৮ হাজার ৫৬৮ এবং তথ্য পেতে ৮৬ হাজার ৬৭১টি কল আসে।
বিগত কয়েক বছরের হিসাবে দেখা যায়, সাধারণত অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত কলের সংখ্যা খুব কম থাকে। যেমন ২০১৯ সালেও ১৮ লাখের মধ্যে ২৪ হাজারের মতো কল ছিল অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত। এবার মোট কলের ৯০ শতাংশই অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত। এ বিষয়ে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম প্রকল্পের পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর মানুষের করোনা নিয়ে উদ্বেগ বেশি ছিল। তাই এ হেল্পলাইনে করোনা নিয়েই ফোন বেশি এসেছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে যখন হেল্পলাইনটি চালু করে, তখন নম্বর ছিল ১০৯২১। ২০১৭ সাল থেকে এটি ১০৯ নম্বরের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে এটি টোল ফ্রি, অর্থাৎ বিনা মূল্যে কল করা যায়।
কর্মকর্তারা জানান, হেল্পলাইনটিতে তিন পালায় (শিফট) ২৪ ঘণ্টা ৭৮ জন কর্মী সেবা দেন। তবে গত আগস্টে জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২৪ ঘণ্টা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেন কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ। তিনি বলেন, গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর এক নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে উদ্ধার পেতে ১০৯ নম্বরে বারবার ফোন করেও সাড়া পাননি। এ বিষয়ে মেহের আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, হেল্পলাইনে জনবল কম। পরিসর আরও বাড়াতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি কী, তা জানতে ১০৯ নম্বরে গত ২৪ নভেম্বর সকাল সাতটা ও বিকেল চারটায় দুবার প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কল করা হয়। দুবারই কল ধরেন কর্মীরা। এর মধ্যে সকাল সাতটায় মো. রাসেল হোসেন নামের একজন কর্মী কল ধরেন। রাসেল বলেন, তিনি রাতের পালায় ৪৫টি কল ধরেছেন। এর মধ্যে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও যশোর থেকে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তিন নারী ফোন করেন। তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযোগকারীকে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।
অবশ্য নারীদের অনেকেই সরকারের এ হেল্পলাইন সম্পর্কে জানেন না। সাতক্ষীরা জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রধান সাকিবুর রহমান বলেন, এটি নিয়ে আরও প্রচার দরকার।