পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে অস্বীকৃতি, গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা

পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে অস্বীকৃতি, গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা

যশোরের অভয়নগর থানার শোভনারা এলাকার অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ হিরা বেগমকে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ঢোকানোর সময় মৃত্যু হয়। ২ ডিসেম্বর, বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে তাকে ঢামেক’এ নেয়া হয়। তার শরীরের এক-তৃতীয়াংশ আগুনে দগ্ধ হয়।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে টানা পাঁচদিন অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। হৃদয়বানদের দেয়া আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে গত রাতে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল তাকে।

জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর থানার মঠপাড়া এলাকার মো. খোকন সরদারের মেয়ের কথিত স্বামী বিল্লাল শেখের দেয়া আগুনে নিভে গেছে হিরা বেগমের (৩৩) প্রাণ। পাশ্ববর্তী দেশের পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কেরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন দেয় বিল্লাল শেখ। আর সে আগুনেই জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন অগ্নিদগ্ধ হিরা।

খুমেক চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হিরা বেগমের শরীরের এক-তৃতীয়াংশ দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালীসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অকেজোর পথে। উন্নত চিকিৎসার জন্যে প্রথমেই তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

অগিদগ্ধ হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগম জানিয়েছেন, যশোরের অভয়নগরের শোভনারা এলাকার আ. রশিদের ছেলে কবির শেখের সাথে পারিবারে সাধ্যমতো আয়োজনে বিয়ে হয়েছিল তাদের একমাত্র মেয়ে হিরা বেগমের। মুদি দোকানি কবির শেখের নতুন সংসার বেশ ভালোই চলছিল সুখে-শান্তিতে। এরমধ্যে বাদসাধে বাদামওয়ালা জাকির হোসেন। প্রথম স্বামী কবির শেখের সংসার ছেড়ে জাকির হোসেনের হাত ধরে নতুন করে সংসার সাজায় হিরা বেগম। এতে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে পিতা-মাতা ও ভাই হিরা বেগমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

তিনি আরো জানান, এর মাস ছয়েক পর অভয়নগরে শিহড়ী এলাকার আক্কাস শেখের ছেলে বিল্লাল শেখের সাথে পরিচয় হয় হিরার। বিল্লাল মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দিয়ে তাকে ভারতে নিতে চায়। কিন্তু কি কাজ করতে হবে সেটা জানতে চায় হিরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রায় মারপিট করতো বিল্লাল। একপর্যায়ে ভারতের পতিতালয়ে হিরাকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করে বিল্লাল। এ পরিকল্পনা গোপনে জেনে যায় হিরা। ফলে ভারতে যেতে রাজি হয়নি তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হিরা বেগমের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বিল্লাল শেখ।

গত ২৬ নভেম্বরের এ ঘটনার পর হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগমকে মোবাইলে আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানায় প্রতিবেশীরা। প্রথমে যাবে না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলেও পরে একমাত্র মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোরের হাসপাতালে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

মৃত হিরা বেগমের ভাই ইয়াছিন সরদার বলেন, আজ বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ঢোকানোর সময় হিরার মৃত্যু হয়েছে। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত বলে নিশ্চিত করে। আমার মা সাথেই আছেন, কিন্তু তিনি এখনো জানেন না যে হিরা আর নেই।

তিনি আরো বলেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় গতকাল ০১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার অভয়নগর থানায় বিল্লাল শেখ, তার পিতা আক্কাস শেখ ও বিল্লালের মাকে আসামি করে মামলা করেছি।

অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *