Blog

কক্সবাজার কারাগারে হাজতির রহস্যজনক মৃত্যু: কারারক্ষী বরখাস্ত

হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় রিমান্ড আদেশ পাওয়া আসামি মোস্তফার কক্সবাজার জেলা কারাগারে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান কারারক্ষী আবু তাহের, সহকারী প্রধান কারারক্ষী ফখরুল ইসলাম ও কারারক্ষী বিল্লাল হোসেনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

একই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন মোস্তফার ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষী জাহাঙ্গীর আলম।

এছাড়াও কারাগারের সর্বপ্রধান কারারক্ষী মো: হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে এ ঘটনায় আগামী ৩ কর্মদিবসে ‘লিখিত কৈফিয়ত’ তলব করা হয়েছে। কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে কারারক্ষী ইকবাল হোসেনকেও। বুধবার (২ ডিসেম্বর) সকালে জেল সুপার নেছার আলম এ তথ্য জানান।

জেল সুপার জানান, কারাগারে বন্দির আত্মহত্যা কোনমতেই কাম্য নয়। হাজতি-কয়েদি এরা আমাদের আমানত। তাদের দেখভালের জন্য ২৪ ঘন্টা কারারক্ষী রয়েছে। এত তদারকির মাঝে কিভাবে হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যা করলো তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তাই সেসময়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। যিনি ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিল তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং যারা দায়িত্বে এড়াতে পারেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) রাতেই এসংক্রান্ত অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

একইদিন বিকেলে বিধি অনুসারে লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল।

এদিকে, সোমবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারাভ্যন্তরেই হাজতি মোস্তফা আত্মহত্যার ঘটনার (কারা কর্তৃপক্ষের দাবি মতে) পরপরই দুইটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটিতে ডেপুটি জেলার সাইদুল ইসলামকে প্রধান করে সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ ও একাউন্টেন্ট খন্দকার আজাদুর রহমানকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধানপূর্বক দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেল সুপার।

একই ঘটনায় কারা হাসপাতালের ডা. মো: শামীম রাসেলকে প্রধান ও ডা. শামীম রেজাকে সদস্য করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাও ঘটনার বিস্তারিত জেনে প্রতিবেদন জমা দিবেন।

কারা কর্তৃপক্ষের কমিটি ছাড়াও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও পৃথক তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্ত চালাচ্ছেন। কক্সবাজার এসেছেন ডিআইজি প্রিজন। তিনিও আলাদা ভাবে তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেল সুপার নেছার আলম।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান আজাদকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা মামলায় কারান্তরীণ হাজতি মোস্তফা রহস্যজনক ভাবে জেলা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। সোমবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হাজতি ময়লাহীন ফাঁসিতে আত্মহত্যায় মারা গেছেন বলে দাবি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

তবে কারাগারে ফাঁসি খাওয়ার মতো কোন অবস্থা বন্দিদের পক্ষে থাকে না বলে দাবি করেছে কারাভোগ করে বের হওয়া অনেক বন্দি। এ কারণে তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেধেছে।

মারা যাওয়া হাজতি মোস্তফা (২৫) কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হরিপুর এলাকার বশির আহমেদের ছেলে। তবে, তারা এলাকায় ‘রোহিঙ্গা’ বলে পরিচিত।

মারামারি ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় গত ১৮ নভেম্বর মোস্তফা কারাগারে আসেন। তার মামলায় ২৯ নভেম্বর রিমান্ড শুনানি ছিল। আদালত তাকে একদিনের রিমান্ডও মনজুর করে। আদালত থেকে তাকে কারাগারে আনার পর তার কক্ষেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে পেয়ে দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক হাজতি মোস্তফাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহীন আবদুর রহমান জানিয়েছিলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে মোস্তফা নামের এক বন্দিকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের আনার আগেই সে মারা যায়। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর হস্তান্তর করা হয়েছে।

কারাভ্যন্তরে হাজতি মোস্তফার মৃত্যুর খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুর্বৃত্ত হামলায় আহত হয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদর আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমান আজাদ লুতু। তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি কখনো বিশ্বাস করা যায় না আমাকে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তফা আত্মহত্যা করেছেন। তাকে কৌশলে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। কোন একটি গ্রুপ আমার উপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন এটা নিশ্চিত। যারা এ ঘটনা ঘটালো তারা জানলো যে, গ্রেফতার মোস্তফার রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। রিমান্ডে নেয়া হলে আমাকে হামলার ঘটনায় কারা জড়িত তা হয়তো উঠে আসতো। তাই কোন কৌশলে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া। বিপুল অংকের বিনিময়ে কূটকৌশলে এমনটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেল সুপার নেছার আলম বলেন, কারাবন্দীরা আমাদের আমানত। তাদের রক্ষা না করে কেন আমরা মারব? তার মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত। এটার রহস্য বের করতে চেষ্টা চলছে।

আর মাত্র চারটি মেডেন দরকার সাকিবের

দিন যত যাচ্ছে, সাকিব আল হাসানের রেকর্ডের খাতাটা ততোই সমৃদ্ধ হচ্ছে। এবার আরও একটি রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আর মাত্র চারটি মেডেন ওভার করতে পারলেই বনে যাবেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মেডেনধারী বোলার।

টি-টোয়েন্টি, এই ফরম্যাটের খেলা মানেই চার-ছক্কার বন্যা। সংক্ষিপ্ত ওভারের এই ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা সব সময় সুযোগ খোঁজেন কিভাবে রানের সংখ্যা বাড়ানো যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই ফরম্যাটে বোলাররা বেশ চাপে থাকেন। সেখানে মেডেন নেয়া কতটা কঠিন সেটা নতুন করে বলার দরকার নেই। যদিও কঠিন এই কাজটি প্রায়ই করে দেখান কয়েকজন খেলোয়াড়। সাকিব তাদের মধ্যে অন্যতম।

ক্রিকেটের সর্বশেষ সংস্করণে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ২৪ মেডেন আছে ক্যারিবিয়ান বোলার সুনিল নারিনের। তার পরের স্থানেই যৌথভাবে আছেন সাকিব এবং স্যামুয়েল বাদ্রি। এই দুইজনের নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ২১টি করে মেডেন ওভার।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে গতকাল (৩০ নভেম্বর) বেক্সিমকো ঢাকার মুখোমুখি হয় জেমকন খুলনা। এদিন অসাধারণ বোলিং করেন সাকিব। চার ওভার হাত ঘুরিয়ে দুই মেইডেন দেন। তুলে নেন ১ উইকেট। এর বিপরীতে খরচ করেন মাত্র ৮ রান।

অনিশ্চয়তা কাটছে, কমছে সোনার দাম

যেমন হু হু করে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছিল, ঠিক তেমনভাবেই কমছে। গতকাল সোমবার সোনার দাম কমেছে ১ শতাংশ। প্রতি আউন্সের দাম হয়েছে ১ হাজার ৭৭১ দশমিক ২২ ডলার। কেবল এই নভেম্বর মাসেই বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৬ সালের নভেম্বরের পর এই প্রথম এক মাসে এত কমল সোনার দাম। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দাম আরও কমবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

কেবল সোনা নয়, গতকাল বিশ্ববাজারে কমেছে রুপা ও প্লাটিনামের দামও। প্রতি আউন্সে ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে রুপার দাম। প্রতি আউন্সের দাম হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৩ ডলার। প্লাটিনামের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে প্রতি আউন্সের দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২০ দশমিক ৩৬ ডলার।

নভেম্বর মাসজুড়েই বিশ্ববাজারে কমেছে সোনার দাম। অথচ কয়েক মাস আগেই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত এই ধাতুর দাম বলা যায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা ঢেউ ও ডলারের দাম কমে যাওয়ায় মানুষ সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ বলে মনে করা শুরু করে।

অনিশ্চয়তা যত বাড়ছিল, ততই বাড়ছিল সোনার দাম। টিকা আসছে, অনিশ্চয়তাও কাটছে। এতে কমতে শুরু করেছে সোনার দর।

করোনা ছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সোনার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার কারণেও সবাই সোনার মজুত বাড়িয়েছিল। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম, নতুন রেকর্ড হয়। গত ২৭ জুলাই প্রথম ৯ বছরের রেকর্ড ভাঙে দাম। বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (এক আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) সোনার দাম বেড়ে হয় ১ হাজার ৯৪৪ ডলার। এর আগে ২০১১ সালে প্রতি আউন্স সোনার দাম উঠেছিল ১ হাজার ৯২১ ডলারে। অর্থাৎ সে সময়ের চেয়ে ২৪ ডলার বেড়ে দামের নতুন রেকর্ড গড়ে মূল্যবান এই ধাতু। ওই বৃদ্ধি নিয়ে বছরের ৭ মাস পর্যন্ত সোনার দাম বাড়ে ২৭ শতাংশ।

এরপরও বাড়তে থাকে দাম। আগস্টে একপর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর ৭ আগস্ট থেকে কিছুটা কমতে দেখা যায়। এভাবেই কমা–বাড়া চলতে থাকে। নভেম্বরে এসে বেশ কমতে শুরু করে দাম। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন ৯ মাস ধরে বিশ্বকে আটকে রাখা করোনা নামক ভাইরাসের একটি টিকা আসছে তা নিয়ে আশা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট আসছেন এবং করোনার সংকট কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে চীন।

আসলে যেকোনো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মন্দার সময় মূলত সোনার চাহিদা বেড়ে যায়। নভেম্বরে করোনার টিকা নিয়ে বেশ কয়েকটি সুখবর আসে। প্রথমে মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক জানায়, তাদের টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকর। এরপর সুখবর দেয় আরেক মার্কিন কোম্পানি মডার্না। এরপর ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে তাদের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে। রাশিয়াও টিকার অগ্রগতির কথা জানায়। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটছে, এমন একটি আশা বিরাজ করতে শুরু করে বিনিয়োগকারীদের মনে। তাঁরা আর হুড়মুড় করে সোনা কিনছেন না। ফলে কমছে সোনার দাম।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিএমসি মার্কেটসের প্রধান কৌশলবিদ মাইকেল ম্যাকার্থি বলেন, ভ্যাকসিন আসছে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আশাবাদ সোনার মতো নিরাপদ-আশ্রয়ে বিনিয়োগের আকর্ষণকে কমিয়ে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে এর দাম ১ হাজার ৮০০ ডলারের নিচে নামায় বিক্রি কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নভেম্বরের শুরুতে মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেন জেতার পর ট্রাম্প গদি ছাড়া নিয়ে ঝামেলা করবেন, এমন একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা কেটে যাওয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে সোনার বাজারে। এ ছাড়া টানা তিন মাস শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে চীনের, যা বিনিয়োগকারীকে ঝুঁকি আছে, এমন মনোভাব থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দর নিম্নমুখী থাকায় দেশের বাজারেও সোনার দাম কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। গত ২৫ নভেম্বর থেকে দেশের বাজারে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার অলংকারের দাম হয় ৭৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি হয় ৭০ হাজার ৬৮৪ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬১ হাজার ৯৩৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার অলংকার প্রতি ভরি হয় ৫১ হাজার ৬১৩ টাকা।

মুদ্রাবাজারেও ভ্যাকসিনের প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ডলারের দাম কমে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি আশা তৈরি হয়েছে যে করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থা হয়তো আরও শিথিল হবে। গতকাল বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। তবে বেড়েছে ইউরো ও অস্ট্রেলিয়ান ডলারের দাম।

এবার স্ত্রীসহ সেই গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়ার সান্তাহার বাফার গুদামের আলোচিত সার কেলেঙ্কারির ঘটনায় গুদামটির সাবেক (অবসরপ্রাপ্ত) উপপ্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) নবীর উদ্দিন খান ও তাঁর স্ত্রী মোহছীনা বেগমের নামে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়ার সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এই মামলা করেন।

দুদক জানায়, গত বছরের ১৬ অক্টোবর প্রথমে নবীর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। এরপরেই নবীর উদ্দিন ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ তাঁর স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেছেন নবীর উদ্দিন। এ কারণে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোমবার নবীর উদ্দিন খান ও তাঁর স্ত্রী মোহছীনা বেগমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

সান্তাহার বাফার গুদামের সার কেলেঙ্কারির অভিযোগে নবীর উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে সার আত্মসাতের অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পর তিনি পলাতক। তাঁর বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সান্তাহার বাফার গুদামে সরবরাহ না করেই বিপুল পরিমাণ সার লোপাট নিয়ে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল প্রথম আলোয় ‘২০ কোটি টাকার সার গেল কই’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিআইসির মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানি করা সার সান্তাহার বাফার গুদামে সরবরাহই করা হয়নি। তা কালোবাজারে বিক্রি করে বলা হয়েছিল সার সরবরাহের নথি উইপোকায় খেয়েছে। এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মশিউর রহমান খান, গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবীর উদ্দিন খান, শ্রমিক লীগের নেতা রাশেদুল ইসলামসহ কয়েকজনের নামে এরপর ২০১৭ সালে অক্টোবরে দুটি মামলা করে দুদক। মামলায় ৪ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন সার গুদাম থেকে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

স্বাধীনতার ধারণাকে জনপ্রিয় করেন বঙ্গবন্ধু: মুহিত

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ধারণাকে বঙ্গবন্ধু ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে বোধগম্য করে তুলেছিলেন। এভাবে তিনি জাতি গঠন ও রাষ্ট্রের ধারণাকে জনপ্রিয় করেছেন।

বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের প্রথম দিনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজধানীর সুগন্ধায় নবনির্মিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ লেকচার সিরিজের আয়োজন করে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল সংকল্প, সাহস, উদারতা এবং দরিদ্রদের প্রতি সমবেদনা। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করার জন্য উর্বর ভূমি, বিশাল জনগোষ্ঠীসহ সবকিছুই তাঁর ছিল। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনকল্যাণের নীতি অনুসরণ করেন জাতির পিতা।

আবদুল মুহিত বলেন, ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। বিখ্যাত নেতা সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে তাঁর আজীবন সম্পর্ক ছিল ছাত্র-শিক্ষকের। জাতির পিতা মাত্র তিন বছর সাত মাসে সংবিধান সংশোধনসহ ৫১৯টি আইন পাস বা সংশোধন করেছিলেন, যাতে জনগণের সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন পাস করেছিলেন।

সূচনা বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ৬৮টি বৈদেশিক মিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ প্রবাসীদের অংশগ্রহণে সেমিনার, ওয়ার্কশপ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বনেতাদের কাছে আমরা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে চাই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দুজন বিশিষ্ট কূটনীতিককে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশি এবং একজন বিদেশিকে স্বর্ণপদক দিতে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নাম ঘোষণা করা হবে।
বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজের প্রথম দিনের আলোচনায় আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। এ ছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ঢাকায় বিদেশি রাষ্ট্রদূত, বুদ্ধিজীবী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ভার্চ্যুয়ালি ও সরাসরি এ আলোচনায় অংশ নেন।

নির্যাতন রোধের হেল্পলাইনে করোনা নিয়ে ৯০% কল

নাটোরের গুরুদাসপুরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইনে (১০৯ নম্বর) ফোন করে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে দেয়। এ ঘটনা চলতি বছরের শুরুর দিকে। মেয়েটি ফোন করার পর হেল্পলাইন থেকে তথ্য পাঠানো হয় গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তমাল হোসেনের কাছে। তিনি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে মেয়েটির বাড়িতে পাঠিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন।

শুধু বাল্যবিবাহ নয়, যেকোনো ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে হেল্পলাইনটি চালু করে। তবে চলতি বছর এতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধবিষয়ক কলের বদলে করোনা নিয়ে জানতে বেশি ফোন আসছে।

নির্যাতন রোধের হেল্পলাইনে করোনা নিয়ে ৯০% কল

হেল্পলাইনটি পরিচালিত হয় মন্ত্রণালয়ের নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায়। তাদের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১১ লাখ ১৯ হাজারের মতো কল আসে। এর মধ্যে মাত্র ১ লাখ ১৯ হাজার কল আসে সাধারণ চিকিৎসা, পরামর্শ, পুলিশি সহায়তা, আইনি সহায়তা ও তথ্য চেয়ে। বাকি কলগুলোকে অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত করা হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, কিছু বাদ দিয়ে অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত কলগুলো মূলত করোনা নিয়ে। ১০ মাসে সাধারণ চিকিৎসা বিষয়ে জানতে ১ হাজার ৭৩৭, পরামর্শ সেবা পেতে ৫৭৯, পুলিশি সহায়তা পেতে ১১ হাজার ৫৭৯, আইনি সহায়তা পেতে ১৮ হাজার ৫৬৮ এবং তথ্য পেতে ৮৬ হাজার ৬৭১টি কল আসে।

বিগত কয়েক বছরের হিসাবে দেখা যায়, সাধারণত অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত কলের সংখ্যা খুব কম থাকে। যেমন ২০১৯ সালেও ১৮ লাখের মধ্যে ২৪ হাজারের মতো কল ছিল অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত। এবার মোট কলের ৯০ শতাংশই অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত। এ বিষয়ে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম প্রকল্পের পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর মানুষের করোনা নিয়ে উদ্বেগ বেশি ছিল। তাই এ হেল্পলাইনে করোনা নিয়েই ফোন বেশি এসেছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে যখন হেল্পলাইনটি চালু করে, তখন নম্বর ছিল ১০৯২১। ২০১৭ সাল থেকে এটি ১০৯ নম্বরের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে এটি টোল ফ্রি, অর্থাৎ বিনা মূল্যে কল করা যায়।

কর্মকর্তারা জানান, হেল্পলাইনটিতে তিন পালায় (শিফট) ২৪ ঘণ্টা ৭৮ জন কর্মী সেবা দেন। তবে গত আগস্টে জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২৪ ঘণ্টা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেন কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ। তিনি বলেন, গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর এক নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে উদ্ধার পেতে ১০৯ নম্বরে বারবার ফোন করেও সাড়া পাননি। এ বিষয়ে মেহের আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, হেল্পলাইনে জনবল কম। পরিসর আরও বাড়াতে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতি কী, তা জানতে ১০৯ নম্বরে গত ২৪ নভেম্বর সকাল সাতটা ও বিকেল চারটায় দুবার প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কল করা হয়। দুবারই কল ধরেন কর্মীরা। এর মধ্যে সকাল সাতটায় মো. রাসেল হোসেন নামের একজন কর্মী কল ধরেন। রাসেল বলেন, তিনি রাতের পালায় ৪৫টি কল ধরেছেন। এর মধ্যে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও যশোর থেকে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তিন নারী ফোন করেন। তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযোগকারীকে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।

অবশ্য নারীদের অনেকেই সরকারের এ হেল্পলাইন সম্পর্কে জানেন না। সাতক্ষীরা জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রধান সাকিবুর রহমান বলেন, এটি নিয়ে আরও প্রচার দরকার।

তামিমের ৬ হাজার

ক্রিকেটের ক্ষুদে সংস্করণে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তামিম ইকবাল। মাইলফলক থেকে ২৭ রান দূরে থেকে বুধবার ঢাকার বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক।

মিরপুর স্টেডিয়ামে বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে ইনিংসের ১১তম ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে ৬ হাজারী ক্লাবে নাম লেখান তামিম। ২১৩ ম্যাচে ২১২তম ইনিংসে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। এই ম্যাচে ব্যক্তিগত ৩১ রানেই আউট হয়েছেন তিনি।

তামিমের আগে টি-২০ ক্রিকেটে এই ক্লাবে স্পর্শ করেছেন ৩৯ জন ব্যাটসম্যান। ৬ হাজারের ক্লাবে নাম লেখানো ১০ম দ্রুততম ব্যাটসম্যান তামিম। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিমের পরই রয়েছেন সাকিব আল হাসান। বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপেই ৫ হাজার রান পূর্ণ করেছেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। এছাড়া ৪ হাজারের বেশি রান আছে মুশফিকের।

আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়বে না

আগামীকাল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদেরর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই সময়ের পর আর রিটার্ন দাখিলের জন্য সময় বাড়ানো হবে না।

রবিবার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এ কথা জানান।

করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ বিবেচনায় সময় বাড়ানো হবে কিনা – এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ ৩০ তারিখের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে আইনি উপায়ে পরবর্তীতে জমা দিতে ( জরিমানা দিয়ে) পারবেন।

অতীতে এই সময়ে আয়কর মেলা আয়োজন হলেও এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় মেলা হচ্ছে না। এর বদলে আয়কর অফিসগুলোতে সবধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কাঠগড়ায় শামি, চাহাল, বুমরাহ!

অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ শেষ। দুটোর একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি ভারত। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে অজিরা। উভয় ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া গড়েছে রানের পাহাড়। এর দায় দলের বোলারদের দিয়েছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তার মতে, নিজেদের কাজটা ভালোভাবে করতে পারেনি বোলাররা।

ফর্মে থাকা স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েলদের সামনে একরকম মুখ থুবড়েই পড়েছে ভারতীয় বোলারদের পার্ফম্যান্স। অজি ব্যাটসম্যানরা যতটা উজ্জ্বল ঠিক ততোটাই মলিন বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, নবদ্বীপ শাইনি, ইয়ুজবেন্দ্র চাহালদের বোলিং। দীর্ঘ বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে একরকম ধোলাই খেতে হচ্ছে তাদের।

যার কারণে ভারতীয় বোলারদের ওপর বিরক্ত কোহলি। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়াতে পারিনি। ওরা আমাদের তুলনায় প্রত্যেকটি বিভাগে ভালো করেছে। বোলাররা ঠিক জায়াগায় বল করতে পারেনি। এটিই কাল হয়েছে। সেই সুযোগ লুফে নিয়েছে অজি ব্যাটসম্যানরা।

নিয়োগ ১০ বছর আগে, উন্নতি নেই কর্মক্ষেত্রে

‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’—এই নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করতে ১০ বছর আগে অ্যাডহক ভিত্তিতে দুই দফায় ৪ হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসককে (সহকারী সার্জন) নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। এরপর গড়িয়েছে অনেক সময়, কিন্তু পরিবর্তন আসেনি এসব চিকিৎসকের ভাগ্যে। এই চিকিৎসকেরা ২০১০ সালে যে বেতনে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, সেই স্কেলে বেতন পাচ্ছেন এখনো।

এই দীর্ঘ সময়ে তাঁদের চাকরি ক্যাডারভুক্ত করা হয়নি, হয়নি পদোন্নতিও। হতাশ হয়ে কেউ কেউ চলে গেছেন অন্য পেশায়।

এসব অনেক দিনের সমস্যা। আমরা এটা দূর করার চেষ্টা করছি। সমাধান হবে। তবে একটু সময় প্রয়োজন

মো. আবদুল মান্নান , স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব

এই চিকিৎসকদের কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, বছরের পর বছর ধরে একই পদে থাকায় তাঁরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। চাকরির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ হওয়ার পরও বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকেরা পদোন্নতি পেয়ে তাঁদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজন জানিয়েছেন, তাঁরা এফসিপিএস, এমডি, এমএস, এফআরসিএসের মতো উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেও কর্মক্ষেত্রে এগোতে পারেননি।

৪ হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে এখন কর্মরত আছেন ১ হাজার ৯৮৬ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অ্যাডহক কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্ত করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে আর কোনো বাধা থাকবে না।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব অনেক দিনের সমস্যা। আমরা এটা দূর করার চেষ্টা করছি। সমাধান হবে। তবে একটু সময় প্রয়োজন।’

নিয়োগ পেয়েছিলেন ৪ হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসক। এখন চাকরিতে আছেন ১ হাজার ৯৮৬ জন।

প্রেক্ষাপট

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইউনিয়ন পর্যায়ের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক–সংকট ছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ২০০৯ সালের ১৩ এপ্রিলের এক সভায় জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসকের পদ শূন্য। এত বিপুলসংখ্যক পদ খালি থাকায় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। সে সময় জনপ্রতিনিধিরাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান। অনেকেই সংসদ অধিবেশনে নতুন চিকিৎসক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৮ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এবং একই বছরের ২৮ জুন তৎকালীন জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কাছে আধা সরকারিপত্র পাঠান। সেখানে তিনি চিকিৎসক–সংকটের কথা উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৪ হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করেন। কিন্তু সরকারি কর্ম কমিশন বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জন নিয়োগের বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে অ্যাডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ২০১০ ও ২০১১ সালে ওই সংখ্যক চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

হতাশা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়োগ দেওয়ার পর এসব চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছিল নিজ জেলা কিংবা আশপাশের উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এসব চিকিৎসকের ভাষ্য, ২০১০-১১ সালে তাঁরা মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু তাঁদের ‘ত্যাগের’ মূল্যায়ন করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে তাঁদের অনেকেই ‘পড়াশোনাসহ নানা কারণে’ ঢাকায় চলে আসেন।

অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া অন্তত ৫০ জন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। চাকরিবিধি এবং পে স্কেল অনুযায়ী তাঁদের সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হয়নি।

চিকিৎসকেরা জানান, তাঁদের মধ্যে অন্তত এক হাজার চিকিৎসক উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত। প্রায় ২০ জন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন। ৭০ জন সাফল্যের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৩১ জুন তাঁদের নিয়োগের ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু চাকরি নিয়মিত হলেও ক্যাডারভুক্ত না হওয়ায় উল্লেখযোগ্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তাঁদের পরে যোগ দেওয়া ৩৩তম বিসিএসের চিকিৎসকেরা ষষ্ঠ গ্রেড পেয়েছেন। আর তাঁরা আছেন নবম গ্রেডেই। অনেকের বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।

চিকিৎসকদের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী অ্যাডহক চিকিৎসকদের ক্যাডারভুক্ত করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেন। কমিটিকে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁরা এখনো কোনো অগ্রগতি দেখছেন না।

আমাদের অনেকেই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু আমাদের ভারমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার

মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা, সাভারের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা

অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের একজন জাতীয় পুষ্টিসেবার উপব্যবস্থাপক নন্দলাল সূত্রধর প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরও তাঁদের স্থায়ী না করা ও পদোন্নতি না দেওয়া দুঃখজনক। সাভারের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বলেন, ‘আমাদের অনেকেই ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু আমাদের ভারমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের ক্যাডারভুক্ত ও পদোন্নতির জন্য অনেক দিন ধরে কাজ করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শারমিন আক্তার জাহান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাকরির মেয়াদ প্রায় ১০ বছর। ক্যাডারভুক্ত না হওয়ায় তাঁরা সবাই প্রারম্ভিক স্কেলে বেতন তুলছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁরা কোনো পদোন্নতি পাননি।

শারমিন আক্তার জাহান জানান, ক্যাডার–বহির্ভূত অস্থায়ী কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্ত করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে আর বাধা থাকবে না।

একজন চিকিৎসকের ১০ বছর পদোন্নতি না হলে তাঁর কি চাকরিতে আগ্রহ থাকে? স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে আমরা বারবার অনুরোধ করেছি সমস্যাটি সমাধান করতে

মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী , বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব

‘বারবার অনুরোধ করেছি’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারই তাঁদের নিয়োগ দিয়েছিল। তাঁরা তো জোর করে চাকরি নেননি। সে সময় তাঁরা মাঠপর্যায়ে যে সেবা দিয়েছেন, তা সবারই জানা। তখন বলা হয়েছিল, তাঁদের ক্যাডারভুক্ত করা হবে। আর পদোন্নতি তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়ার কথা। এখন তাহলে কেন তাঁদের পদোন্নতি আটকে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘একজন চিকিৎসকের ১০ বছর পদোন্নতি না হলে তাঁর কি চাকরিতে আগ্রহ থাকে? স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে আমরা বারবার অনুরোধ করেছি সমস্যাটি সমাধান করতে।’