Blog

পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে অস্বীকৃতি, গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা

যশোরের অভয়নগর থানার শোভনারা এলাকার অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ হিরা বেগমকে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ঢোকানোর সময় মৃত্যু হয়। ২ ডিসেম্বর, বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে তাকে ঢামেক’এ নেয়া হয়। তার শরীরের এক-তৃতীয়াংশ আগুনে দগ্ধ হয়।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে টানা পাঁচদিন অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। হৃদয়বানদের দেয়া আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে গত রাতে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল তাকে।

জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর থানার মঠপাড়া এলাকার মো. খোকন সরদারের মেয়ের কথিত স্বামী বিল্লাল শেখের দেয়া আগুনে নিভে গেছে হিরা বেগমের (৩৩) প্রাণ। পাশ্ববর্তী দেশের পতিতালয়ে বিক্রির প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কেরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন দেয় বিল্লাল শেখ। আর সে আগুনেই জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন অগ্নিদগ্ধ হিরা।

খুমেক চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হিরা বেগমের শরীরের এক-তৃতীয়াংশ দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালীসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অকেজোর পথে। উন্নত চিকিৎসার জন্যে প্রথমেই তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

অগিদগ্ধ হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগম জানিয়েছেন, যশোরের অভয়নগরের শোভনারা এলাকার আ. রশিদের ছেলে কবির শেখের সাথে পারিবারে সাধ্যমতো আয়োজনে বিয়ে হয়েছিল তাদের একমাত্র মেয়ে হিরা বেগমের। মুদি দোকানি কবির শেখের নতুন সংসার বেশ ভালোই চলছিল সুখে-শান্তিতে। এরমধ্যে বাদসাধে বাদামওয়ালা জাকির হোসেন। প্রথম স্বামী কবির শেখের সংসার ছেড়ে জাকির হোসেনের হাত ধরে নতুন করে সংসার সাজায় হিরা বেগম। এতে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে পিতা-মাতা ও ভাই হিরা বেগমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

তিনি আরো জানান, এর মাস ছয়েক পর অভয়নগরে শিহড়ী এলাকার আক্কাস শেখের ছেলে বিল্লাল শেখের সাথে পরিচয় হয় হিরার। বিল্লাল মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দিয়ে তাকে ভারতে নিতে চায়। কিন্তু কি কাজ করতে হবে সেটা জানতে চায় হিরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রায় মারপিট করতো বিল্লাল। একপর্যায়ে ভারতের পতিতালয়ে হিরাকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করে বিল্লাল। এ পরিকল্পনা গোপনে জেনে যায় হিরা। ফলে ভারতে যেতে রাজি হয়নি তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হিরা বেগমের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বিল্লাল শেখ।

গত ২৬ নভেম্বরের এ ঘটনার পর হিরা বেগমের মা মাজিদা বেগমকে মোবাইলে আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানায় প্রতিবেশীরা। প্রথমে যাবে না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলেও পরে একমাত্র মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোরের হাসপাতালে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

মৃত হিরা বেগমের ভাই ইয়াছিন সরদার বলেন, আজ বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ঢোকানোর সময় হিরার মৃত্যু হয়েছে। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত বলে নিশ্চিত করে। আমার মা সাথেই আছেন, কিন্তু তিনি এখনো জানেন না যে হিরা আর নেই।

তিনি আরো বলেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় গতকাল ০১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার অভয়নগর থানায় বিল্লাল শেখ, তার পিতা আক্কাস শেখ ও বিল্লালের মাকে আসামি করে মামলা করেছি।

অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।

শীতের শুরুতেই হাসপাতালে ভিড়

ঢাকায় কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা জোগাড় করতে রোগীর স্বজনদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালগুলোর প্রায় সব আইসিইউ শয্যাই ভর্তি। সাধারণ শয্যাগুলোতেও রোগী বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনার ৯টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১১৩টি। গতকাল মঙ্গলবার ৯৭টি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল। ফাঁকা ছিল ১৭টি শয্যা, অর্থাৎ ৮৬ শতাংশের বেশি আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিল।

করোনার জন্য নির্ধারিত চারটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জটিল করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় অনেক রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

করোনার জন্য নির্ধারিত যে হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা বাড়াতে সরকার চেষ্টা করছে। যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই আইসিইউর ব্যবস্থা করা হচ্ছে

হাবিবুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (এমআইএস)

শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে সরকার। এরই মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্ত রোগীর হার ঊর্ধ্বমুখী। গত ১৬ নভেম্বর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দৈনিক ২ হাজারের ওপরে থাকছে। একই সঙ্গে মৃত্যুও বাড়ছে।

শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯-এর জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্তদের ৪০ শতাংশের উপসর্গ থাকে মৃদু। মাঝারি মাত্রার উপসর্গ থাকে ৪০ শতাংশের। তীব্র উপসর্গ থাকে ১৫ শতাংশের। আর জটিল পরিস্থিতি দেখা যায় বাকি ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে। তীব্র উপসর্গ ও জটিল রোগীদের প্রায় সবার এবং মাঝারি উপসর্গ রয়েছে এমন অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। জটিল প্রায় সব রোগীর আইসিইউ শয্যার পাশাপাশি ভেন্টিলেটর দরকার হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (এমআইএস) হাবিবুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনার জন্য নির্ধারিত যে হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা বাড়াতে সরকার চেষ্টা করছে। যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই আইসিইউর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের কোনো আইসিইউ শয্যাই গতকাল ফাঁকা ছিল না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি শয্যার ১১টিতে, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টি শয্যার ১০টিতে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৪টিতেই রোগী ভর্তি ছিল।

সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম। কোনো হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা নেই। বাধ্য হয়ে মাকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে

মেহেদী হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউর বিভাগীয় প্রধান শাহজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালের ১০টি আইসিইউতে সব সময় রোগী ভর্তি থাকছে। একটা শয্যার জন্য একাধিক রোগী অপেক্ষায় থাকছে। ঢাকার বাইরে থেকে করোনার জটিল রোগীদের ঢাকায় পাঠানোর কারণে আইসিইউগুলোতে রোগীর চাপ বেশি। আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় অনেক জটিল রোগীকে অন্য হাসপাতালেও পাঠাতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের মা রহমত আরা এখন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। মেহেদী বলেন, ‘সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম। কোনো হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা নেই। বাধ্য হয়ে মাকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।’

অবশ্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় করোনা রোগীদের জন্য নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ রয়েছে ২০৩টি। এর মধ্যে গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ১২৯টি শয্যায়। অবশ্য তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল ৪৩টি। এই হাসপাতাল বাদে অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই বললেই চলে।

রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১২টি আইসিইউ সুবিধাসহ ৪২ শয্যার করোনা ইউনিট রয়েছে। গতকাল এই হাসপাতালের আইসিইউ এবং সাধারণ কোনো শয্যা ফাঁকা ছিল না। হাসপাতালের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ সময় সব শয্যাতে রোগী থাকছে। বিশেষ করে আইসিইউ ফাঁকা থাকছেই না।

ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জটিল করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আইসিইউ শয্যা জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সাধারণ শয্যাতেও রোগী বাড়ছে

করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ঢাকার নয়টি সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যাতেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। একসময় সাধারণ শয্যার ৭০ শতাংশের বেশি শয্যা ফাঁকা থাকত। অথচ গতকাল ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর ৭৫ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ২ হাজার ৩৯৭টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৯১টি শয্যায় গতকাল রোগী ভর্তি ছিল। করোনার জন্য নির্ধারিত নয়টি ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি বেড়েছে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ২৭৫টি। গতকাল এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ৩৫২ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার চেয়েও ৭৭ জন রোগী বেশি ভর্তি ছিল এই হাসপাতালে। এর আগে গত সোমবার ধারণক্ষমতার চেয়ে ৬৬ জন বেশি রোগী ভর্তি ছিল।

আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে না, সাধারণ শয্যাতেও রোগী ভর্তি থাকছে। দেশে আবার করোনা রোগী বাড়তে শুরু করেছে, এটি তারই ইঙ্গিত। এত দিনেও আইসিইউ শয্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি, এটি দুঃখজনক। সরকার করোনার জন্য নির্ধারিত যেসব হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছিল, সেগুলো আবার দ্রুত চালু করতে হবে

আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য

ঢাকার বাইরে রোগীর চাপ কম

করোনার চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর বাদে সারা দেশে এখন সাধারণ শয্যা আছে ৭ হাজার ১৬৪টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব হাসপাতালে গতকাল ভর্তি ছিলেন ৫৫৬ জন। খালি ছিল ৬ হাজার ৬০৮টি শয্যা। অর্থাৎ ৯২ শতাংশ শয্যা খালি পড়ে ছিল। আবার নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) রয়েছে ২১৯টি। গতকাল আইসিইউতে ছিলেন ৮৩ জন। অর্থাৎ আইসিইউর ৬২ শতাংশ শয্যা ফাঁকা ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন আর মারা গেছেন ৬ হাজার ৬৭৫ জন। চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৭৭ হাজার ৩২৬ জন।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে না, সাধারণ শয্যাতেও রোগী ভর্তি থাকছে। দেশে আবার করোনা রোগী বাড়তে শুরু করেছে, এটি তারই ইঙ্গিত। এত দিনেও আইসিইউ শয্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি, এটি দুঃখজনক। সরকার করোনার জন্য নির্ধারিত যেসব হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছিল, সেগুলো আবার দ্রুত চালু করতে হবে।

যেকোনো সময় সরকারের সিংহাসন ডুবে যাবে : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সরকারকে উদ্দেশ্য বলেছেন, আপনারা মনে করছেন আপনাদের অনেক ক্ষমতা। ধরে নিয়ে যাবেন, গুম করে দেবেন। কিন্তু কখন যে আপনাদের সিংহাসন চোরাবালির মধ্যে ডুবে যাবে আপনি সেটা টেরই পাবেন না।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একেএম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকুরিচ্যুত করার প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দুজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কেনো করা হয়েছে? তারা কি কোনো অন্যায় করেছে? কোনো দুর্নীতি করেছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত করার যে আইন আছে সেই আইনের মধ্যে কি তারা পড়েছে? অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে কেনো চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তা আপনারা জানেন। তিনি জিয়াউর রহমানের নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছেন। এইটা হচ্ছে অপরাধ।

তিনি বলেন, একেএম ওয়াহিদুজ্জামান রাজনীতির করুণ দশা নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য করতেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রথমে মামলা করা হলো, চাকরিচ্যুত করা হলো ডা. মোর্শেদকে। ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, মামলা নিষ্পত্তি হয়নি, তার আগেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমি সরকারে উদ্দেশ্য বলতে চাই, আপনি যদি বলেন যারা ভিন্নমতে বিশ্বাসী, যারা বিরোধী দলের বিশ্বাসী, তোমাদের খাওয়ার অধিকার নাই, তোমাদের তৃষ্ণা পেলে পানি খাওয়ার অধিকার নেই, তোমরা ক্ষুধায়- তৃষ্ণায় মরে যাও। আপনি এই কর্মসূচি দেন।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কী? ছাত্রদের পড়ানো। শিক্ষকতা করা। ড. মোর্শেদ তাই করতেন। তিনি মেট্টিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত সবগুলোই ফার্স্টক্লাস পাওয়া। মেট্টিক ও ইন্টারমিডিয়েটে স্ট্যান্ড করেছে। তাকে বহিষ্কার করা হলো। ওয়াহিদুজ্জামানও সবগুলোতে প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত শিক্ষক। না হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায় না। ড. মোর্শেদের অতুলনীয় মেধা। তাকে ভিন্নমতের কারণেই চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিতে পুর্নবহালের দাবিও এ সময় জানান তিনি।

মানববন্ধনে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, মৎসজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তিতাসের চার প্রকৌশলীসহ ৮ জন রিমান্ডে

তিতাসের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চার প্রকৌশলীসহ প্রতিষ্ঠানটির আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

শনিবার ঢাকা ও নারায়ণঞ্জের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের আটকের পর নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে সংঘটিত বিস্ফোরণের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এরপর গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেককে দুই দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন-তিতাস নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বি, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারি প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মো. মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, হেলপার মো. হানিফ মিয়া ওকর্মচারী মো. ইসমাইল প্রধান।

এর আগে মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার ৩ দিন পর গত ৭ সেপ্টেম্বর ওই ৮ জনকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজ চলাকালে পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে মসজিদের ভেতরে ৩৪ জন দগ্ধ হন। ওই ঘটনায় মসজিদের আশপাশে থাকা আরও ৩ জন দগ্ধ হন।

দদ্ধ ৩৭ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার পর্যন্ত ৩৩ জন মারা যান। চিকিৎসাধীন বাকি ৩ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

সোহরাওয়ার্দীতে পরিচালকের কক্ষ ঘেরাও চিকিৎসকদের, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকরা নিরাপদ আবাসনের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। এই দাবিতে তারা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

শনিবার সকালে তারা এই অলটিমেটাম দেন। এ সময় নিরাপদ আবাসনের দাবিতে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকরা হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, উপ-পরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদ এবং মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও কোভিড ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. শাহাদাৎ হোসেন রিপনের কক্ষ ঘেরাও করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, আমাদের কোনো আবাসনের ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করতে পারেনি। অথচ দৈনন্দিন দায়িত্বপালন শেষে বাসায় ফিরতে হবে। একাধিক চিকিৎসকের পরিবারের একাধিক সদস্য আমাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। অনেক চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা এভাবে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তারপরেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা এভাবে আমাদের পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। তাই আমরা কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। এর ভেতরে কোয়ারেন্টিনের কোনো সমাধান না হলে, আমরা কোভিড ইউনিটে আর ডিউটি করব না। তবে হাসপাতালের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাব।

এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহারাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও কোভিড ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. শাহাদাৎ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এমনিতেই আমাদের লোকবল কম। তারপর কোভিডের পাশাপাশি ননকোভিড চিকিৎসাও চলছে। যেহেতু কিছু চিকিৎসক কোভিড চিকিৎসায় নিযুক্ত তাই তাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্যকর্মীদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তাই বাধ্য হয়ে তাদের বাসায় থাকতে হচ্ছে। এতে তাদের পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাব। পাশাপাশি অন্যান্য হাসপাতালে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে সেটি দেখে পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করার চেষ্টা করব।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, চিকিৎসকরা আমাদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন, তাদের আবাসিক সমস্যা সমাধানের জন্য। চিকিৎসকদের দাবি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে আমি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি এবং মন্ত্রণালয়কেও এটা জানাব।

প্রসঙ্গত, গত ১২ এপ্রিল রাজধানীর ছয় হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ১৯টি হোটেল নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু গত ২৯ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসিক হোটেলের সুবিধা বাতিল করা হয়।

পরিপত্রে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার মধ্যে দায়িত্বপালনকারী একজন চিকিৎসক দৈনিক দুই হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ৮০০ টাকা, একজন নার্স ঢাকার মধ্যে এক হাজার ২০০ ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা এবং একজন স্বাস্থ্যকর্মী ঢাকার মধ্যে ৮০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৬৫০ টাকা ভাতা পাবেন।

ঢাকা ওয়াসার পরিচালক পদে ষষ্ঠবারের মতো তাকসিম এ খান।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের চুক্তির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ছে। শনিবার ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ৯৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ৯ জন সদস্যের মধ্যে ৬ জন চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়। এ কারণে বোর্ড প্রকৌশলী তাকসিমের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড সদস্য এবং ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইডিইবি) সভাপতি এ কে এম এ হামিদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আজ (শনিবার) ওয়াসা বোর্ডের সভা ছিল। ওই সভায় সংস্থার বর্তমান এমডির চুক্তির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’

জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রথম ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর চারবার চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে ওয়াসা বোর্ড। পঞ্চমদফা চুক্তির সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ অক্টোবর। নতুন করে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে গত ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভার এটা আলোচ্য সূচীতে না থাকায় এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না।

ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান ড. এম এ রশিদ সরকার গত ১০ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার পর নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের আগেই তড়িঘড়ি করে এমডি নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড।

এদিকে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যম ও নির্ভরযোগ্য প্রত্যক্ষ তথ্যসূত্র অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের বিশেষ সভায় শুধুমাত্র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম উল্লেখ করে তাকে আবারো তিন বছর মেয়াদে পুননিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্তের কথা বলা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী এ পদে দরখাস্ত আহবান করা হয়েছিল কিনা, কারা আবেদন করেছিলেন, কেন তারা যোগ্য বিবেচিত হলেন না বা কেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকই একমাত্র উপযুক্ত প্রার্থী। কেন সংশ্লিষ্ট বিধি অবমাননা করে মেয়াদের পর মেয়াদ একই ব্যক্তিকে অপরিহার্য, এসব প্রক্রিয়াগত প্রশ্নের উত্তর যাচাই করা হয়েছে কিনা, তার কোনো উল্লেখ নেই।

তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্চিত যে, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না বা করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধে অপারগতার কারণে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডেরও অপসারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানাই।’

দলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় পছন্দের লোক খুঁজছেন তারেক রহমান।

দলে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় নিজের পছন্দের লোক খুঁজছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আস্তে আস্তে তিনি নিজের ঘনিষ্ঠদের বসাতে শুরু করেছেন। তবে কমিটি গঠন করতে গিয়ে অনেক জায়গায় তিনি বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সংগঠন হিসেবে বিএনপির বর্তমান যে কাঠামো সেটি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতেই গড়া। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দলকে তিনিই দেশের অন্যতম বড় দলে পরিণত করেন। দলটির বিভিন্ন কমিটিতে শীর্ষ এবং গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ নেতাকে ‘খালেদা জিয়ার টিম’ বলে মনে করা হয়। কিন্তু আড়াই বছর ধরে বড় ছেলে তারেক রহমান দলের হাল ধরেছেন। আর এ কারণেই দলে তাঁর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আছে। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। কারণ তারেক রহমানকে তাঁরা কেউ অসন্তুষ্ট করতে চাইছেন না।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দল সাজানোর ঘটনা সত্যি নয়। বিএনপির সবাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। দলে কোনো বিভাজনও নেই।’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পদ শূন্য হলে যোগ্য নেতাদেরই পদায়ন করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুন্দরভাবে দল পরিচালনা করছেন।’

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘বিএনপির সবাই তাঁর (তারেক রহমান) পছন্দের। সবাই তাঁর।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘তারেক রহমান যাঁদের যোগ্য বলে মনে করেছেন তাঁদেরই বিভিন্ন পদে মনোনীত করেছেন। আর যোগ্য বলে দলও তাঁদের গ্রহণ করেছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক নেতা বলেন,  ‘ওয়ারিশ সূত্রে সব কিছুর মালিক তারেক রহমান। সেই অর্থে আমার মালিকও তিনি। তা ছাড়া তাঁর মা খালেদা জিয়ার পদায়নকৃত নেতাদের কেউ তো তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছেন না।’

একটি দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দল পরিচালনা করছেন তারেক। দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠকগুলোতে সভাপতিত্ব করছেন তিনি। গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হওয়ায় কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের ‘ফিরোজা’য় আছেন। তবে দল পরিচালনার ওই নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকারের পাশাপাশি বিএনপির আইনজীবী নেতারাও বলছেন, আইনগতভাবে খালেদা জিয়া এখনো মুক্ত নন। ফলে আপাতত তিনি রাজনীতি করতে পারছেন না। পাশাপাশি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ভবিষ্যতেও তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না এ নিয়েও দলের সর্বস্তরে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ কারণে নানামুখী আলোচনা সত্ত্বেও দলটির সিনিয়র নেতারা আস্তে আস্তে তারেকের কর্তৃত্ব মেনে নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, অনেক কিছু অপছন্দ হলেও রাজনৈতিক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাঁরা দলের বাইরে গিয়ে ‘অনাস্থা বা অবিশ্বাসে’র খাতায় নাম লেখাতে চান না।

এ প্রসঙ্গে আলোচনায় বারবার উঠে আসছে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নাম। এক-এগারোর পর সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপনের মধ্য দিয়ে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাঁর সমর্থক বলে পরিচিত অনেকের রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থকদের কেউ কেউ বিএনপি ছেড়ে গেছেন। আবার অনেকে দলে ফিরতে পারলেও কোণঠাসা অবস্থায় আছেন।    

১৯৮৩ সাল থেকে খালেদা জিয়ার একক নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে বিএনপি। দল পুরোপুরি তাঁর নেতৃত্বে থাকার সময় তারেক রহমানের প্রভাব থাকলেও সেটি তেমন দৃশ্যমান ছিল না। যদিও ২০০১ সালের নির্বাচন পরিচালনা এবং মন্ত্রিসভা গঠনের নেপথ্যে তারেকের বেশ কিছু সমর্থক স্থান পেয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে বসার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারেকের ভূমিকা প্রথম দৃশ্যমান হয় খালেদা জিয়া কারাগারে থাকতে। ২০১৯ সালের ১৯ জুন স্থায়ী কমিটিতে তিনি মনোনয়ন দেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং সেলিমা রহমানকে। ওই দুজন তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হলেও দলে এ নিয়ে সমালোচনা হয়নি। তবে ওই সময় কেউ কেউ বলেন যে স্থায়ী কমিটিতে তারেকের মতামতের পক্ষে কথা বলার লোকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি গঠনও তারেকের পছন্দের লোকদের সমন্বয়ে হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। কমিটির চেয়ারম্যান পদে আমির খসরু ছাড়াও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরসহ বেশ কয়েকজন সদস্য তারেকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তারেকের সমর্থক হলেও নওশাদ জমিরকে নিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে সমালোচনা আছে। 

এর আগে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগরীর উত্তর বিএনপির কমিটি গঠিত হয় তারেক রহমানের পছন্দের লোকদের দিয়ে। ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যার আসামি এম এ কাইয়ুম অনেক বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করলেও তারেকের ইচ্ছায় তাঁকেই উত্তরের সভাপতি করা হয়। তবে ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে সমালোচনা আছে। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত কাইয়ুম দেশে ফিরতে পারছেন না বলে মনে করা হয়। ওই ঘটনায় মহানগর উত্তর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছর ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের হাতে উত্তরের কমিটির নেতারা লাঞ্ছিত হন।

সর্বশেষ তারেকের সিদ্ধান্তে ওই কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ নিয়েও কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়। গত ৭ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে আহসান উল্লাহ হাসান মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটির সহসভপাতি আবদুল আলী নকিকে। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের ওই পদে নিয়োগ পাওয়ার কথা।

এদিকে গত সংসদ নির্বাচনের পর দল গোছানোর উদ্যোগ নিলেও নানামুখী বাধা ও আপত্তির কারণে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কমিটি অনেক জায়গায় করতে পারেননি তারেক রহমান। এ নিয়েও দলে অনেক ধরনের আলোচনা আছে। তারেকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সাইফুল আলম নিরবের নেতৃত্বে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি যুবদলের আংশিক কমিটি  ঘোষিত হলেও আজ পর্যন্ত দেশের সব জায়গায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দুই দফায় সময় বাড়ানো হলেও চলতি সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের কমিটির ঘোষণার মাত্র দুই দিনের মাথায় হঠাৎ করেই গত ৯ সেপ্টেম্বর ওই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠন উদ্যোগ নিয়েও তারেক রহমান পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। বরিশাল বিভাগে বেশির ভাগ জেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কমিটি গঠন করা যায়নি।

লাইনচ্যুত ট্রেনের মতো রাজনীতিও লক্ষ্যচ্যুত

পঙ্কজ ভট্টাচার্য ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিক বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আমলের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে জেল খেটেছেন। সমাজ ও রাজনীতির হালচাল নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

  • আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যে আদর্শের কথা বলে, তৃণমূলের নেতারা তা পালন করেন না। সেখানে দেখা যায়, টাকা দিয়ে পদপদবি কেনা যায়। জামায়াতের লোকজনও আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। দুর্নীতিবাজেরা ঢুকে পড়েছে।
  • বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আমলে যত অর্জন হয়েছে, সব রাজনৈতিক আন্দোলনের ফল নয়। সামাজিক শক্তিরও বিরাট ভূমিকা ছিল। ছাত্রদের ভূমিকা ছিল। শুধু রাজনীতি দিয়ে সমাজ বদলানো যাবে না।

 

আপনারা বলেন, পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই সব অধোগতির শুরু। কিন্তু তিয়াত্তরের নির্বাচনেও তো কারচুপি হয়েছে।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: তিয়াত্তরের নির্বাচনেও কারচুপি হয়েছে। ১২-১৩টি আসনে ফলাফল বদলে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া আসনে ন্যাপের বিজয়ী প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের অনেকে মনোনয়নপত্রও জমা দিতে পারেননি। তবে সেই নির্বাচনে কারচুপি না হলেও আওয়ামী লীগই জয়ী হতো। ক্ষমতার পরিবর্তন হতো না।

তখনকার রাজনীতির সঙ্গে এখনকার ফারাকটা কোথায়?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: একাত্তরে পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র পরিচালনায় চার মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ৯ মাসের মধ্যে সংবিধান রচিত হয়েছিল। সেই সংবিধানে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি ছিল না। এরপরও বলব, এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান ছিল। এরপর সংবিধান অনেকবার কাটাছেঁড়া করা হলো। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা আছে। আমাদেরও ব্যর্থতা আছে। আশির দশকে, নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ যেখানে ছিল, সেখানে নেই।

আওয়ামী লীগের আপসটা কী?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: তারা বলছে সংবিধানে চার মূল নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। আবার রাষ্ট্রধর্মও রেখে দিয়েছে। দুটি একসঙ্গে চলতে পারে না। তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ করার কথা বলছে। আবার হেফাজতে ইসলামের পরামর্শে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে এসব করতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা কমে গেলে এ অবস্থা হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব যে আদর্শের কথা বলে, তৃণমূলের নেতারা তা পালন করেন না। সেখানে দেখা যায়, টাকা দিয়ে পদপদবি কেনা যায়। জামায়াতের লোকজনও আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। দুর্নীতিবাজেরা ঢুকে পড়েছে।

স্বাধীনতার পর আপনারা (ন্যাপ-সিপিবি) আওয়ামী লীগের সঙ্গে লীন হয়ে গেলেন কেন?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও পাকিস্তানকে পরাস্ত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও আমাদের চিন্তাধারার মিল ছিল। ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সিপিবি নেতা মণি সিংহ ও খোকা রায়ের বৈঠকে হয়েছিল। ছাত্র আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলন আমরা একসঙ্গে করেছি। যদিও ঐক্যের বিষয়ে মতভেদ ছিল। স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক বাস্তবতা আমাদের ওই দিকে ঠেলে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের সমর্থন ছিল। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিরোধিতা এবং উসকানি ছিল। তখন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখাই মুখ্য ছিল। এরপরও মনে করি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে না গিয়ে গঠনমূলক বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল।

একদা বাম রাজনীতি করতেন। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই ছিল আপনাদের মূল স্লোগান। সেখান থেকে সরে এলেন কেন?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমরা উপলব্ধি করলাম, অন্য কোনো দেশের মডেল বা মতাদর্শের রাজনীতি দিয়ে এগোনো যাবে না। বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী রাজনীতি করতে হবে। এ কারণেই প্রচলিত বাম ধারা থেকে বেরিয়ে এসে মানবতাবাদী রাজনীতি করেছি।

একসময় চীনপন্থীদের সম্পর্কে দল ভাঙার অভিযোগ ছিল। এখন মস্কোপন্থীরাও নানা ভাগে বিভক্ত। এর পেছনে আদর্শ না নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব কাজ করেছে?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: এখানে আদর্শ গৌণ। মূলত ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির দ্বন্দ্বই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আমি নতুন করে ঐক্যের চেষ্টা করছি। গণতান্ত্রিক পার্টি, ন্যাপ মোজাফ্‌ফরের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। তাঁদের অনেকেই একমত যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে বাইরে থেকে একটা চাপ সৃষ্টি করা দরকার, যাতে রাষ্ট্র অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে দূরে সরে না যায়। আমরা সমাজের ন্যায়–নীতিনিষ্ঠ মানুষগুলোকে একত্র করতে চাই। গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির উদ্বোধন চাই।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রত্যয় ছিল গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রের এখন কী অবস্থা?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: এটি একটি বড় বিষয়। পাকিস্তান আমলে যে গণতন্ত্র ছিল, যে নির্বাচন ছিল, যাতে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটেছে; এখন তো সেই নির্বাচন নেই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনই তো দেশকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে গেল। গণতন্ত্র এখন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, মানুষের অন্তরে নেই। বর্তমানে গণতন্ত্র হলো প্রশাসনিক গণতন্ত্র, আমলাতান্ত্রিক গণতন্ত্র।

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে পাকিস্তান আমল থেকে আপনারা আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন করে সামরিক শাসককে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। যার লক্ষ্য ছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন। এখন সেই পরিবেশ কি আছে?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: মানুষ আস্থা হারিয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন একের পর এক দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে চলেছে। এই ব্যবস্থা না বদলালে মানুষকে নির্বাচনমুখী করা যাবে না। ভোটারশূন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তাতে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটছে না। আমরা যদি সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। গণতন্ত্রের যে ক্ষীণধারা চলছে, তা–ও হয়তো হারিয়ে যাবে।

নির্বাচনী ব্যবস্থা যে ভেঙে পড়ল, এ জন্য কাকে বেশি দায়ী করবেন? সরকার না নির্বাচন কমিশন?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: নির্বাচন কমিশন সিংহভাগ দায়ী। এই কমিশন হলো মেরুদণ্ডহীন। ১০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হলেই তারা সন্তুষ্ট হয়। সরকারও সন্তুষ্ট। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা এটি করতে পেরেছে।

২৩ বছর আগে পার্বত্য চুক্তি সই হয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ কী?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া বাঙালি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। সরকার বলছে তিন ভাগের দুই ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বলছে, তিন ভাগের এক ভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, বাঙালিদের পাশাপাশি পাহাড়ি ও সমতলের জাতিগোষ্ঠী থেকেও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁদের ওপর ঔপনিবেশিক শাসন চালানো গৌরবের কথা নয়। সমতলের জাতিগোষ্ঠীর লোকজনও বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসন নির্বিকার। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়। বাস্তবায়ন হয় না। গাইবান্ধায় তিনজন সাঁওতালের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হলো। রাষ্ট্র দায় নিল না। যাঁরা উচ্ছেদ হলেন, তাঁরা পৈতৃক সম্পত্তিও ফেরত পেলেন না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সমতলের জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের কথা বলেছিল। বাস্তবায়িত হয়নি।

করোনাকালে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: করোনার কারণে চাকরি হারানো, জীবিকা হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতি বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর নির্দেশ পৌঁছায় না। আজ স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, সড়ক বিভাগের অবস্থা খুবই নাজুক। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট যে রায় দিলেন, তা–ও বাস্তবায়িত হয় না।

রাজনীতির পাশাপাশি আপনি সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত। সেটি কি রাজনৈতিক হতাশা থেকে?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: ১৯৯৬ সালে এসে দেখলাম রাজনীতি বৃহত্তর মানুষের জীবনকে তেমন স্পর্শ করতে পারছে না। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ নিজেদের মতো প্রতিবাদ করছে। এই সামাজিক প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধারাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আমরা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অজয় রায়ের মতো মানুষ এর সঙ্গে ছিলেন। এর মাধ্যমে আমরা অসাম্প্রদায়িক শক্তির সমাবেশ ঘটাতে চেয়েছিলাম। অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগাতে চেয়েছিলাম। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হলো। ডাকসুর নির্বাচনেও নতুন শক্তির উত্থান দেখলাম। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামে একটি সংগঠন নির্বাচনে জয়ী হলো। প্রচলিত ছাত্রসংগঠনগুলো সাধারণ ছাত্রদের সমর্থন পেল না। এরপর কিশোর-তরুণেরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করল। এ কারণে এখনো আশাবাদ আছে। নতুন প্রজন্ম জাগবে। সবাইকে নিয়েই পরিবর্তন আনতে হবে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আমলে যত অর্জন হয়েছে, সব রাজনৈতিক আন্দোলনের ফল নয়। সামাজিক শক্তিরও বিরাট ভূমিকা ছিল। ছাত্রদের ভূমিকা ছিল। শুধু রাজনীতি দিয়ে সমাজ বদলানো যাবে না।

মহানবী কে নিয়ে কুটূক্তিঃ নাস্তিক কাজী ওয়াহিদুজ্জামানের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও দেয়াল লিখন

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে এথিস্ট নোট নামে একটি অনলাইন পোর্টালের একটি ম্যাগাজিনে জঘন্য ও ঘৃণ্য কুটূক্তি করার অভিযোগে বর্তমান ব্লগারদের মধ্যে অন্যতম কাজী ওয়াহিদুজ্জামানের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের মতে কাজী যে এই প্রথম মহানবী (সা:) কে নিয়ে কুটূক্তি করেছেন এমনটি নয়, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর নিজের বিভিন্ন ব্লগ, একাধিক ম্যাগাজিন, ওয়েসাইটে মহানবী (সা:), আল্লাহ এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে খুবই জঘন্য ভাষায় লিখে আসছে।

আজ সোমমার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মাতুয়াইলে বিশ্বনবীর (স:) মর্যাদা রক্ষা ও নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও হেফাজতে ইসলামের ডাকে এই সমাবেশে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসাসহ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও অংশ নেন।

এর আগে গত ১৬ই ফেব্রয়ারী ২০২০ইং তারিখে মোকাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৮ ধারায় হৃদয় কাজী নামে হেফাজতে ইসলামের এক কর্মী মাহাদী হাসান সহ এথিস্ট নোটের ম্যাগাজিননের সকল ব্লগার এবং নাস্তিকদের নামে মামলা দায়ের করেন। এই ছাড়াও এই একই ব্লগার এথিস্ট ইন বাংলাদেশ নামে একটি ম্যাগাজিনে লিখবার কারনেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয় বলে আমাদের আদালত সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে সমাবেশের অন্যতম ব্যক্তি হৃদয় কাজীর কাছে সাংবাদিকরা এই বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আমাদের জানান যে, ”৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে কেউ এমন জঘন্য কুটূক্তি করবে, আমাদের প্রাণের পিয় মানুষটিকে নিয়ে এভাবে উল্টা পাল্টা লেখালেখি করবে আর আমরা বসে থাকবো?”

তিনি আরোও বলেন, ”দেখুন কাজী ওয়াহিদুজ্জামান নামের এই নাস্তিকের দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের কার্যকলাপগুলো চালিয়ে আসছে। নিজের ব্লগে সে প্রতিনিয়তই মুহাম্মদ (সা:) এবং আল্লাহকে নিয়ে খুবই বাজে বাজে স্ট্যাটাস, এদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।”

তিনি আরো বলেন, ‘এই নাস্তিক এথিস্ট নোট ম্যাগাজিন এবং এথিস্ট ইন বাংলাদেশ এই দুই ম্যাগাজিনেই নিয়মিত আল্লাহর রাসুল সম্পর্কে কটুক্তি করে। আমি এই দুই ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধেই আইনের আশ্রয় নিয়েছি এবং এদের সঠিক বিচক্সার যদি না হয় তাহলে দরকার হলে এদের খুন করে আমি ফাঁসিতে হাসতে হাসতে ঝুলবো’

হৃদয় কাজী সহ এই সবাবেশে উপস্থিত থাকে সকল বক্তারা অবিলম্বে কটূক্তিকারী কাজী ওয়াহিদুজ্জমানের ফাঁসি এবং সরকারকে বিশ্বনবীর বিরুদ্ধে অবমাননার জন্য ফাঁসির দন্ডের বিধান রেখে আইন পাশের দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন বক্তারা। এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মামলার আসামি কাজী ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।

উল্লেখ্য, বেশ কয়েক মাস যাবতই এথিস্ট নোট, এথিস্ট ইন বাংলাদেশ এই দুই ওয়েবসাইট ইসলাম, আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ (সা:) এর বিরুদ্ধে  লেখালেখি করে আসছে। আর এরই ধারাবাহীকতায় এবার তারা দুইটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে এবং এখানেও মুসলমানদের কলিজা মুহাম্মাদ (সা:) সহ যেসব বিষয়গুরো তুলে ধরা হয়েছে যা দেখেই হেফাজতে ইসলাম এতো ক্ষিপ্ত হয়েছে এবং এই ম্যাগাজিনের সকলের নামে মামলাও দায়ের করেছে।

Helping hands are ready for you in a possible way

Mauris lacus dolor, ultricies vel sodales ac, egestas vel eros. Quisque posuere quam eget eleifend semper. Suspendisse tempus nisi ut lorem suscipit lobortis. Vestibulum faucibus tellus ut metus sodales feugiat. Integer ut erat sed dui sagittis suscipit et suscipit risus.

Morbi at auctor diam, non ultrices enim. Proin eget diam in ligula consequat viverra. Nunc suscipit odio non purus pellentesque, sed aliquet urna facilisis. Donec a pellentesque nulla. Etiam nec quam dapibus, rutrum est vitae, rhoncus sem. Curabitur in nibh lectus. Sed suscipit vestibulum lorem vitae mattis. Maecenas pharetra finibus viverra.

Maecenas in quam dignissim, ultricies sem in, vulputate nulla. Donec convallis mi a justo aliquet, sit amet tempor dui lobortis. Sed dignissim a ex ullamcorper sodales.

Mauris lacus dolor, ultricies vel sodales ac, egestas vel eros. Quisque posuere quam eget eleifend semper. Suspendisse tempus nisi ut lorem suscipit lobortis. Vestibulum faucibus tellus ut metus sodales feugiat. Integer ut erat sed dui sagittis suscipit et suscipit risus.

Morbi at auctor diam, non ultrices enim. Proin eget diam in ligula consequat viverra. Nunc suscipit odio non purus pellentesque, sed aliquet urna facilisis. Donec a pellentesque nulla. Etiam nec quam dapibus, rutrum est vitae, rhoncus sem. Curabitur in nibh lectus.

Sed suscipit vestibulum lorem vitae mattis. Maecenas pharetra finibus viverra. Maecenas in quam dignissim, ultricies sem in, vulputate nulla. Donec convallis mi a justo aliquet, sit amet tempor dui lobortis. Sed dignissim a ex ullamcorper sodales.